গঙ্গাসাগর হল পূর্ব-ভারতের বৃহত্তম ধর্মীয় জনসমাগম যেখানে মানুষ অতি প্রাচীন কাল থেকে এই বিশ্বাস নিয়ে আসে যে সাগরসঙ্গমের পবিত্র জলে ডুব দিলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ গঙ্গাসাগর মেলায় আগমন করে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রশাসন সর্বদা তৎপর।

রাত্রিতে পর্যাপ্ত আলো

গঙ্গাসাগরে এসে তখনই তীর্থযাত্রীরা বাড়ির মত স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন যখন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখা হবে। বৃহৎ জনসমাগমে মূলত মহিলা, বয়স্ক মানুষেরা ও শিশুরা দুর্বৃত্তদের শিকার হয়। সেই কারণে মেলা প্রাঙ্গণ ও সন্নিহিত অঞ্চল সারা রাত পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে যাতে দর্শনার্থীদের কোনও বিপদ না হয়।

এটিএম

যেহেতু গঙ্গাসাগর মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ দূরের একটি দ্বীপ সেখানে মেলার জন্য প্রয়োজনীয় এটিএম প্রস্তুত করা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু যেখানে এই বিপুল পরিমাণ মানুষ আসে সেখানে যথেষ্ট পরিমানে এটিএম খুবই প্রয়োজন। সেই কারণে মেলা প্রাঙ্গণে জরুরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক এটিএম নির্মাণের কাজ চলছে।

২৪/৭ সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ

পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জনসমাগমকে শান্তিপূর্ণ রাখতে মেলা প্রাঙ্গণে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সম্পূর্ন এলাকা ১১৫০ সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে রাখা হবে।

পানীয় জল

পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জীবনযাপনের জন্য প্রাথমিক চাহিদাগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিশুদ্ধ পানীয় জল। দূষিত পানীয় জল বিভিন্ন জলবাহিত রোগের বাহক এবং এর থেকে বহু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সেই কারণে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় ৫০ লক্ষ পানীয় জলের পাউচ বিতরণ করা হবে।

ডুবুরি

মেলা চলাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলা করতে প্রায় ২১০০ সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক ও গভীর জলের ডুবুরি মোতায়েন করা হবে। ২৫ টি দমকলের গাড়ি সহ ১০টি অস্থায়ী দমকল কেন্দ্র মেলা প্রাঙ্গণের বিশেষ বিশেষ স্থানে স্থাপন করা হবে। মেলা উপলক্ষ্যে ৮ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ পর্যন্ত মেলায় আগত তীর্থযাত্রী, সরকারি আধিকারিক, পুলিশ, এনজিও, পরিবহন ও মিডিয়া কর্মীদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার বিশেষ দুর্ঘটনা বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আপৎকালীন অগ্নিজনিত অপসারণ ব্যবস্থা

গঙ্গাসাগরের মত এত বড় মেলায় মোক্ষপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে উপস্থিত হন। এমত পরিস্থিতিতে যেকোনও সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই কারণে বিশেষ নিরাপত্তা দল যেকোনও ঘটনার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। ২৫ টি দমকলের গাড়ি সহ ১০টি অস্থায়ী দমকল কেন্দ্র মেলা প্রাঙ্গণের বিশেষ বিশেষ স্থানে স্থাপন করা হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণের সাথে আপৎকালীন অগ্নিজনিত অপসারণ ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়।

পথ নির্দেশিত পথ

হোগলা হাট

জরুরী চিকিৎসা সুবিধা

স্বাস্থ্য শিবির

গঙ্গাসাগরের পবিত্র পুণ্য ভূমিতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা মোক্ষের আকাঙ্খায় সমবেত হন সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবসময়ই এক উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকে। মেলায় আগত তীর্থযাত্রীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন একটি ২৪/৭ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের আয়োজন করে। সাগর ও কাকদ্বীপ এলাকায় ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন থাকবে। বিমান,জল ও স্থল অ্যাম্বুল্যান্সেরও ব্যবস্থা থাকবে।

তীর্থযাত্রীদের শেড

ভারতবাসীর সংস্কৃতি হল - ‘অতিথি স্বয়ং ঈশ্বর’। সমস্ত তীর্থযাত্রীরাই গঙ্গাসাগরে অতিথি। মেলায় আগত সকল তীর্থযাত্রীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা আহ্বায়কের দায়িত্ব। তাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের প্রয়োজনীয় বিশ্রামের স্থান ও নিরাপদ আশ্রয় দিতে জেলা প্রশাসন অনেক তীর্থযাত্রী শেড প্রস্তুত করে।

গণশৌচালয়

গঙ্গাসাগর মেলার আযোজন করার সময় তীর্থযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা জেলা প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। মেলায় আগত লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর জন্য শৌচালয় নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন। মকর সংক্রান্তির সময় মেলায় আগত যাত্রীদের জন্য ১০,০০০ স্থায়ী ও অস্থায়ী গণশৌচালয় নির্মিত হয়েছে। ৭টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট কার্যকরী থাকবে। বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ৩০টি ই-কার্ট মোতায়েন করা হবে।

সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য সাগরবন্ধু

‘জীবনের সমস্ত প্রয়োজনে বন্ধুরা সবসময় পাশে থাকে’ - এই প্রবাদ গঙ্গাসাগরের মত তীর্থস্থানের ক্ষেত্রেও যে ভীষণ ভাবে সত্য এটা আপনি বুঝতে পারবেন যখন আপনার সাথে সাগরবন্ধুর সাক্ষাৎ হবে। সাগরবন্ধুরা গঙ্গাসাগর মেলার সহযোগী যারা যে কোনও প্রয়োজনে তীর্থযাত্রীদের সাহায্য করেন। এই বছরও, সাগরবন্ধুরা তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি আসন্ন যেকোনও বিপদ থেকে সতর্ক করবেন।

স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য স্যানিটেশন দল

পরিবেশ বান্ধব পণ্যের ব্যবহার

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা আবশ্যক। কিন্তু মানুষ আত্মার শোধন করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গঙ্গাসাগর এলেও পরিবেশ নিয়ত দূষিত করতে থাকে। ক্রমাগত দূষণ বৃদ্ধি এই গ্রহকে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছে। সেই কারণেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন সাগরে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ন বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে মেলা প্রাঙ্গণে পরিবেশ বান্ধব পণ্য বিতরণ করা হবে।

Find near you

  • ATM
  • Bus Stand
  • Ferry Ghat
  • Fire Station
  • Hospital
  • Police Station
  • Toilet
  • Water Source
  • Post Office
  • Office And Others