অতীতে গঙ্গাসাগর মেলা

গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এই মহাতীর্থের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতের বনপর্বে। যার থেকে তর্কযোগ্যভাবে বলা যায়, এই মেলা প্রায় ২০০০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দেরও বেশি প্রাচীন।

১৯৩৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত, ব্রজেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ’সংবাদপত্রে সেকালের কথা’ বই-এ উল্লিখিত ঊনবিংশ শতাব্দীর সংবাদপত্র ‘হরকরা’-এ প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায় ৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাসাগরে প্রথম কপিল মুনি মন্দির নির্মিত হয়। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে মহাকবি কালিদাসের লেখা রঘুবংশম কাব্য থেকেও গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়।

মধ্যযুগে দেশের প্রতিটি কোণা থেকে তীর্থযাত্রীরা আসতেন এই মহাতীর্থে, জলে কুমীর ও ডাঙায় বাঘের ভয়কে উপেক্ষা করে। শুধু তাই নয়, যাত্রাপথে পুণ্যার্থীদের অনেককেই কলেরা ও পক্সের মত ভয়াল রোগেরও মুখোমুখি হতে হত। এত বিপদ সত্ত্বেও পুণ্যার্থীরা জীবনে একবার অন্তত এই তীর্থক্ষেত্রে যেতেন মোক্ষপ্রাপ্তির আশায়। যার থেকে বিখ্যাত এই প্রবাদের উদ্ভব - ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’। ভয়ঙ্কর বিপদসঙ্কুল এই তীর্থযাত্রার আভাস পাওয়া যায় সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’-এ।

এই সমস্ত কিছুরই প্রভাব অতীতকাল থেকে পড়েছে কপিল মুনির মন্দিরে। সমুদ্র পৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বেশ কয়েকবার কপিল মুনির মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। লোককথা থেকে জানা যায়, বর্তমান মন্দিরের আগে আরও ৬টি মন্দির ছিল যেগুলি সমুদ্রের গ্রাসে ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমান মন্দিরটি ১৯৭৩ সালে (কিছু সূত্রের মতে ১৯৭১ সালে) অযোধ্যার হনুমানগড়ি আশ্রমের মোহান্ত শ্রী রামদাসজী মহারাজের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়।

সময়ের সাথে সাথে গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন লোককথা মিশে গেছে বর্তমান মানুষের আধুনিক যাপনে। ২০২১ ও ২০২২ সালে শুরু হওয়া ই - স্নান ও ই - পূজা - র মত অনন্য উদ্যোগ এই মেলাকে পৌঁছে দিয়েছে সারা বিশ্বের প্রতিটি পুণ্যার্থীর দোড়গোড়ায়।